মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার ও সমাজ ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না। আর এই পরিবার ও সমাজে থাকতে হলে তার একটা পরিচয় দরকার। যে পরিচয়ের প্রাথমিক দিকটা বহন করে তার নাম। নাম যে শুধু একজন মানুষের পরিচয়ই বহন করে তা নয়। বরং নামের মধ্য দিয়ে তার পরিবার, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধও ফুটে উঠে। আর একারণেই নাম রাখার সময় সবাই সুন্দর ও অর্থবহ নাম খুঁজে। উচিৎও এটাই।
প্রতিটা মানুষই তার নিজের নামকে ভালোবাসে। কেউ যখন সুন্দরকরে তার নাম ধরে ডাকে তখন তার অবচেতন মন খুশী হয়। অন্যদিকে কেউ যখন তাকে বিকৃত নামে ডাকে তখন তার অবচেতন মন অসন্তুষ্ট হয়। এবং উক্ত ব্যক্তির প্রতি তার ভেতর একধরনের ঘৃণা সৃষ্টি হয়। মনোবিজ্ঞান বলে, কাউকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে তার নাম মনে রাখা এবং কখনো দেখা হলে তাকে তার নাম ধরে ডাকাটা খুব জরুরী। পবিত্র কোরআনে কাউকে বিকৃত নামে না ডাকার ব্যপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইরশাদ হচ্ছে –
“আর তোমরা একে অপরকে নিয়ে বিদ্রূপ করো না৷ এবং পরস্পরকে খারাপ বা বিকৃত নামে ডেকো না৷”
একজন মানুষকে তার ভালো নামে না ডাকার অর্থ হলো তার একটি হক নষ্ট করা। কখনো এটা হয় গীবতের শামিল, যা মারাত্মক ধরনের কবিরা গুনাহ।
এ তো ছিলো নাম বিকৃত করার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ। বাস্তব জীবনেও আমরা অনেক সময় এমন ঘটনার মুখোমুখি হই যেখানে কেবল নাম বিকৃত করার কারণে একজন মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। তেমনই একটি ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে আমি উল্লেখ করছি-
ছেলেটার নাম আল-আমীন। আমাদের পাশের মহল্লায় থাকে।’বিশ্বাসী’ এই ছেলেটার কেন যেন মানুষের ভালো নাম থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। সে প্রায় সবাইকেই বিকৃত নামে ডাকে এবং ডাকতে পছন্দ করে। কয়েকদিন আগে সে সামাজিক মাধ্যমে ‘সাগর’ নামের এক ছেলেকে ‘ছাগল’ বলে মন্তব্য করে। আর তখন ‘ছাগল’ ডাকা সাগরের বাবা পাগল হয়ে তাকে সায়েস্তা করার জন্য মনস্থির করে। শুরু হয় মৌখিক ঝগড়া। এক পর্যায়ে সে ঝগড়া মুখ থেকে চলে আসে হাতে। আর হাতের ঝগড়া নাকি খালিহাতে জমে না। বড়সড় একটা লাঠি দিয়ে সাগরের বাবা আঘাত করে আল-আমীনের মাথায়। আর তাতেই খেল খতম। না না… মারা যায়নি। কয়েকদিন হাসপাতালের চক্কর কেটে এখন পাগল হয়ে বাড়ীতে বসে আছে। এখন হয়তো আল-আমীনের সবকিছুর উপর বিশ্বাস ফিরে এসেছে। কিন্তু কী লাভ তাতে,অনেক দেরী হয়ে গেছে যে!
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
“সুন্দরতম নাম সমূহের অধিকারী আল্লাহ, অতএব তোমরা সেসব নাম ধরে তাঁকে ডাকো। যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো, তাদের কৃত কর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে।”
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কোনো মানুষকে বিদ্রুপাত্মক নামে ডাকতে নিষেধ করেছেন। আর এর পিছনের হেকমতটা কী সেটা আমরা আল-আমীনের ঘটনা থেকেই বুঝে নিতে পারি।
আমাদের অনেকের ভেতরেই মানুষকে বিকৃত নামে ডাকার একটা প্রবণতা আছে। এটা করে আমরা মজা পাই, যা আদৌ কাম্য নয়। কাউকে তার ভালো নামে ডাকলে যদি তার মন খুশী হয় তাহলে এটা হবে সদকার শামিল। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।