আমাদের কর্ম ক্ষেত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে আমাদের ফিকির আফকারও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ছে। অথচ উচিৎ তো ছিলো, আমরা যে যে খানেই থাকি। যে যে কাজই করি না কেন! আমাদের ফিকির যেন এক থাকবে। আর আমাদের ফিকির তো থাকবে ইলাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর দিকে।
সময় আর যুগের তাকাযা অনুযায়ী আমাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে যেতে হয়,থাকতে হয়। তাই বলে কি আমরা আমাদের বুনিয়াদি চিন্তা- ফিকির। যেটা আমরা লালন করি, সেটাকে ভুলে যাবো? এটা কিন্তু সমীচিন নয়। বরং আমাদের কে সেই ফিকির লালন করতে হবে। আমরা তো মুহাম্মাদি নবুয়তের নববি ইলমের উত্তরসূরি।ঠিক সে রকমভাবে আম্বিয়া- রাসুলেরও উত্তরসূরি। তাই তাদের চিন্তা, তাদের কর্ম, তাদের ইখলাসি নিয়্যত, ইলাল্লাহ, আল্লাহর দিকে ডাকা। এটাই হবে আমাদের বুনিয়াদি ফিকির।
এরকম ভাবেই আমাদের আকাবিরীনে হযরতগণ যে সকল কাজ করেছেন, ঐক্যের সাথে। তারা ভিন্ন ভিন্ন ফিকির তাদের ভিতরে লালন করতো না। কারণ, যেহেতু সব ফিকিরের মুল তো হলো একটাই, ইলাল্লাহ। তাহলে শাখা চিন্তা ভিন্ন ভিন্ন হবে কেন? তাই তারা এক চিন্তা নিয়ে কাজ করতেন। হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুবি (রাহিঃ) উনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলেন।তার সেই ফিকির নিয়ে হেরার রশ্মিকে পুরো আলমে বিস্তার করার উদ্দেশ্যে। যে রশ্মিটা আসছিলো মহান রব্বে কারিমের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে। এরপর ফিকির করলেন, এই রশ্মিটা সারা বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে দিবেন। প্রথমে কিছু মুবাল্লিগ ছাত্র, প্রিয় তালিবে ইলম তৈরী করতে হবে। যারা এই ফিকির নিয়ে নিজেদের গড়বে, যে ফিকির উনি লালন করেন। তাই করলেন প্রথম ছাত্র , পরবর্তীতে সময়ের শাইখুল হিন্দ।কিন্তু ঐ সময়ের সাধারণ একজন ছাত্র মাহমুদ। উস্তাদ ছিলেন মোল্লা মাহমুদ। তাতে কি! সেই কাসেমি চিন্তা নিয়ে গড়লেন। তাকে তিনিও গড়লেন।
ঠিক সেই ফিকির নিয়ে, পরবর্তিতে তিনিই হলেন শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি রাহিঃ।
উনি সেই একি চিন্তা নিজের মধ্যে লালন করেন,
যে চিন্তা দিয়ে কাসেম নানুতুবি তাকে গড়েছেন। সেই সময়ে আগে ছিলো একজন। আর এখন হলো দুজন ফিকর ওয়ালা। এভাবে কাসেম নানুতুবির পরিপূর্ণ ফিকর নিজের মধ্যে লালন করে শাইখুল হিন্দ মেহনত শুরু করলেন।ধীরে ধীরে বিস্তৃত আকার ধারণ করলো। আস্তে আস্তে উনিও সেই ফিকির নিয়ে ছাত্র তৈরী করেছেন। ইনি হয়ত উনার উস্তাদের ফিকির ধারণ করে, ঐ রকম একটা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন নি। তবে কাসেম নানুতুবি যে ফিকির আর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
উনি একমাত্র সেই লক্ষ্যকেই সামনে রেখে কাজ করে গেছেন। আর ছাত্র তৈরি করেছেন। আমরা তো তাদেরই সম্পদ। এভাবে আমাদের আকাবিরে দেওবন্দ, উনারা মেহনত করে গেছেন। কাজ করে গেছেন। সে কাজ ধীরে ধীরে বিস্তৃত হলেও, তারা প্রত্যেকেই এক ফিকির নিয়ে কাজ করে গেছেন । ফলে উনাদের ইন্তেকাল হয়ে গেলেও উনাদের রেখে যাওয়া, তৈরী করা যোগ্য ছাত্ররা ঠিকই আছেন। তারা ও ঠিকই একি ফিকির নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
অতএব, আমাদেরকেও সেই একই ফিকির ঠিক রাখতে হবে, এক রাখতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন হতে দেয়া যাবে না। অভিন্ন রাখতে হবে। আমরা যারা হক আর হক্কানিয়াতের পথে আছি। সবাই যেন একি ফিকির লালন করি এবং ধারণ করি। এটাই যেন আমাদের কাম্য হয়। আল্লাহ তায়ালা উম্মাহর এই নাজুক সময়েও এক থাকার এবং ঐক্য থাকার তাওফিক দান করেন, কবুল করেন। আমিন।
মোঃ নোমান হাসান
শিক্ষার্থী, দাওরায়ে হাদিস
কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাংগাইল।