লালণকন্যা মীম নাম টা শুনতেই মন হতচকিয়ে উঠে।যতদূর জানি, পড়েছি লালন তো বৈরাগ্য জীবন বেছে নিয়েছিলেন তাহলে কে স?সে আর কে হবে কুষ্টিয়া বিশ্বিবদ্যালয়ের লোকসাহিত্য বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের সেই মেয়েটি নাম যার শাহরীন সুলতানা মীম। ভক্তরা ভালোবেসেই লালন কন্যা মীম নাম দিয়েছে।লালনের গানকেই বেছে নিয়েছেন।গুণগুণ করে গান গাওয়া থেকে শুরু করে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।গান করে অনেক খ্যাতি কুড়িয়েছেন নিজ মফস্বলে।
অনেকটা জেদ ধরেই গানের জগতে আসা মীমের।যখন সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী গানের প্রতিযোগিতায় প্রাইজ পায়নি বলে, বাসায় এসে বায়না ধরলো বাবার কাছে নিয়ম করে গানের উস্তাদ রেখে দিতে।তাই করা হল ঠিক পরের বছর প্রাইজ পেয়ে গেল সেই সাথে প্রথম হলো।ছোটবেলায় খুদে গান রাজে গান করত । বিটিভে তে বৃত্তের বাইরে পোগ্রাম ও করেছে।এছাড়াও চ্যানেল আই এর তাঁরায় তাঁরায় দ্বীপশিখা অনুষ্ঠানে তৃতীয় হয়েছিলেন। সংস্কৃতি মনা পরিবারটায় তাঁর জন্ম।তার গান শেখায় সবাই অনুপ্রেরণা দিত তার বাবা। পুরো পরিবারের আগ্রহ আর আশীর্বাদের কোনো কমতি ছিলনা।সব প্রোগ্রামের খোজঁ খবর রাখতেন মীমের পিতা আর বড় ভাই। পিতার সাথে যেতেন দাদা বাড়ি কুষ্টিয়ায়। সেই সুবিধায় লালনের আখড়াই গিয়ে গান করতেন।দর্শক মহলে ও খুব ছোট থাকতেই সাড়া ফেলেছিল মীম।তার গানে খুশি হয়ে ছোট বাচ্চা থেকে নিয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের মনেই নাড়া দিয়েছিল।
কে জানত?তার এই জেদের গান শেখায়, একটা পরিচয় বহন করে নিয়ে আসবে। ভার্সিটি তে তাকে দু জায়গায় পাওয়া যেত হয়ত ক্যাফে নয়ত ক্লাসে।ভার্সিটিতে ভালো একটা পরিচয় ও আছে। ২০১৭ তে ক্যাফেতে গান করতেন বন্ধি বান্ধব পরিচিত অপরিচিত সকলে মিলে। প্রতিদিনকার আড্ডার রুটিনে ছিল মীমের গান গাওয়া।নিজের ভালো লাগা থেকে গান করতেন।
দিনটি ছিল ১৯শে অক্টোবর ২০১৯ মীম নিজেও জানতনা আজকের দিনে তার গানটির ভিউ হবে চল্লিশ হাজারের উপর। গান করেছিল অপরিচিত কিছু মানুষের অনুরোধে।মোবাইলে রেকর্ড অতপর ভিউ দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এম,কে ওমায়েরের রিকোয়েস্ট গান করেছিল, “এক চোখেতে হাসন কান্দে আরেক চোখে লালন”। তিনি গানটি তাঁর এফবি ওয়ালে লালন কণ্যা মীম নামে পোস্ট করেন।সাথে সাথে দেখা যায় চমক ভিউর সাথে যোগ হয়েছে শেয়ারও। এখন পর্যন্ত ২৬ লাখ ভিউ আছে গানটির।
লালন সংগীতের মধ্যে তার গান রয়েছে অসংখ্য।যে গান গুলোতে মীম ভালোবাসা কুড়িঁয়েছেন, ” এক চোখেতে লালন কান্দে আরেক চোখে হাছন,যে আল্লাহ ডাক দিছে আমায়,খাঁচার ভেতর অচিন পাখি,তোমার দিল কি দয়া হয়না,তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা,আমার বন্ধু দয়াময়,ধন্য ধন্য মেরা,মানুষ একটা দুই চাকার সাইকেল,রসের রসিক সহ আরো কিছু জনপ্রিয় গান করেন। একের পর এক লোকসংগীত আর লালনের গান করে দর্শক মহলে জায়গা করে নিয়েছন লালন কণ্যা মীম।
মধুর স্মৃতির এক অংশ ২০২০ সাল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বন্ধ বান্ধব নিয়ে আড্ডায় মগ্ন মীম। এক টোকাই এসে মীমকে ১০ টাকা দিচ্ছে, তার কাছে আর টাকা নাই তাও জোর করছে টাকাটা নেওয়ার জন্য, ১০ টাকা না নেওয়াতে সে ভাবছে ৫০ টাকা দিব, মীম বলল তোর কাছে টাকা নেই কোথায় থেকে দিবি?উত্তরে টোকাি বলল বড় ভাই থেকে এনে দিব,অবশেষে টাকা না নেওয়াতে মীমকে চকলেট ধরিয়ে দিল এবং বলল, আপনি লালন কণ্যা না এই চকলেট গুলো আপনার জন্য। তাদের চোখে মুখে যে ভালোবাসা দেখেছি, এটায় বা কম কিসের।
লালনকণ্যা মীম বলেন, গানটাকে আমি কখন ভালোবেসে ফেলছি বুঝিনি,লালনের গানকে নিজের মধ্যে ধারণ করাটাও মনে অজান্তেই হয়ে গেছে। গানটাকে পেশা হিসেবে নয় নেশা হিসেবে নিতে চাই।গানের সাথে থাকতে চাই। মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু সংস্কৃতির রুচিবোধ জাগাতে চাই।প্রতিবছর লালনের একটা মেলা করতে চাই ,লালন গানকে যারা ভালোবাসে তাদের কে একটা প্লাটফর্ম নিয়ে আসতে চাই । লালনের গানের ধারার এক অংশ হলেও নবীন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।
শিক্ষার্থী,
সরকারি তিতুমীর কলেজ।