চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস :
একদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করে মোবাইলটি বেজে উঠলো।কল আসেনি এসেছে একটি ম্যাসেজ অপরিচিত নাম্বার।ম্যাসেজটির ধরন ছিলো আপনজনদের মতো।মাত্র দুটি লাইন লেখা ছিলো।তাঁতেই মনের গভীরে নাড়া দেয় আকাঙ্ক্ষা জাগে কে এই ব্যক্তি?
ফোন করা যাক, ফোন করে ব্যর্থ হলাম বার বার।রিসিভ হলো না আমার নাম্বারটি।তখন বিকল্প পথ একটাই ম্যাসেজ।ম্যাসেজের উত্তর ম্যাসেজ দিয়েই নেওয়া যেতে পারে।এভাবেই ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা হয় বেশ কদিন।তারপর তাকে দেখার বেশ আগ্রহ জন্ম নেয় হৃদয়ে। পরিচয় গোপন করে অপরিচিত সেজে একটু মজা করার চেষ্টা করে।
এমন করেই আমার হৃদয়ে স্থান দখল করে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে।আমার সাথে তোমার প্রথম পরিচয় আর পাঁচজনের মতোই ছিলো।পরে তুমি ধরনটা পাল্টে নিলে কিভাবে তুমি জানো।পরে ফেসবুকে কিছুদিন কথা হতো।
তোমার টাইমলাইনে কে কখন কি লিখতো তা নিয়েই সময় কেটে যেতো রাগ অভিমানে।কি অদ্ভুত ভালোবাসা ছিলো আমাদের।মনে হতো তুমিই আমার নিজের জীবন।যাকে জান বলে সবে আমিও তাই বলেছি।একটা সময় টাইম লাইন দেখে মন ভরতোনা
দেখা করার পরিবেশ সেও তুমি ঠিক করে নিলে।সকাল সন্ধ্যা দেখা হতো তাতেও মন ভরতোনা।দুপুরে একসাথে না খেলে পেট ভরতোনা কারো।এই ভালোবাসার বন্ধন অল্প দিনেই সৃষ্টি হয়।মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো বন্ধন করে দিয়েছে
দুটি জীবন এক হয়ে একটি পরিপূর্ণ ভাবে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।একজনার শরীর খারাপ হলে অন্যজন কষ্ট পেতাম।
এভাবেই ভাগাভাগি করে নিয়ে সময় অতিবাহিত করে ভালোবাসার স্বাক্ষি হিসেবে তৃতীয় মাত্রা তৈরি হয়।সমাজ আর শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিসর্জন দিতে হয় তাকে এমন করে।
বছর বছর কেটে যায়।ভালোবাসা ও ভালোলাগা খুন্ন হয়নি কখনও।মনে হতো একটা জীবনে এতো সুখ কি করে হতে পারে। মনে হয় সব দুঃখ কষ্ট চলে গেলো জীবন থেকে।কিন্তু ভয় একটা কাজ করতো সব সময় সে কারো ছলোনার জালে জড়িয়ে না পড়ে।তাই তার প্রতি দ্বায়িত্ব কর্ত্বব্য বেড়ে যায়, তখন শুরু হয় একটু বিচ্ছিন্নতা।
যাকে সুখি করতে জীবনের শেষ চেষ্টা টুকু করতে মধু আহরন করেও পরিপূর্ণ করতো।সেই মানুষটিকে ভুলে তখন পাল্টে যায় পূর্নিমার ঘোর আঁধারে কি করে তাকে আলোর পথে ফিরানো যায়।আলাদীনের চ্যারাগ হতে চেয়েছি সাধনা করে।যখনি সে স্মরন করবে হাজির হতে হবে তার সামনে।রাত দিন ঝড় বৃষ্টি কোন কিছুই বাধা দিয়ে ঠেকাতে পারতো না।নিত্যনতুন কিছু উপহার দিতাম খুশি করতে।প্রদীপ জ্বালিয়ে আঁধার আলো করেছি তার বাসর রাত ফুলে ফুলে পাপড়ি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি বিছানা।
একদিনের জন্য বাহিরে গেলে ছুটির জন্য দরখাস্ত দিয়ে তাকে খুশি করেছি।বহুবার মনে হতো প্রেমটা যেন অফিসিয়াল নিয়মের মতো একটা রুল থাকে।চিঠি পেলে খুশি হয় তাই ৭টি কলমের কালি দিয়ে লেখা একটি চিঠি দিলাম প্রিয় ভালোবাসার জন্য।আর কি করবো একজনকে খুশি করতে।তার হাসি মুখ দেখাই ছিল আমার প্রতি দিনের চেষ্টা।তাকে শিক্ষা দিলাম কি করে ফেসবুক ব্যবহার করতে হয়।নিজে কি করে নিজেকে সেভ রাখতে হয়।টাইম লাইনে সব পোষ্ট দেয়া যায় না তাতে মানুষ পেয়ে বসবে, তোমাকে বাজে প্রস্তাব দিতে সাহস পাবে।তুমি কেমন মানুষ সচেতন করতে গিয়ে নিজে হয়ে গেলাম শত্রু পক্ষের একজন।হঠাৎ সে অনলাইন পারদর্শী হলো।
সে নানান চক্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে ,দুটি জীবন ভাবতেই কেমন লাগে।যেদিন তোমার ব্লক লিস্টে চলে গেলাম সেদিন থেকে কত লেখালেখি হয় তো দেখনি বা দেখেছো হয়তো বন্ধুদের প্রোফাইল থেকে।
আচ্ছা কখনো ভেবে দেখেছ একসময় কতটা পরিচিত ছিলাম আমরা।আর এখন থেকে একে অপরকে চিনি না।এই অপসনটা তো ফেসবুক আমাদের দিল।ইচ্ছা থাকলে চোখের সামনে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিতে পারো।তারপর পরিচিত মানুষকে দূরে রাখতে।ইচ্ছাই যথেষ্ঠ অপমান আর অবোহেলা করে তাড়িয়ে দিলে আঁধারে।হাত ধরে কতো প্রতিশ্রুতি দিলে বুকে মাথা রেখে মরতে চাইতে একসাথে।বৃদ্ধ বয়সেও পাশে থাকতে দাবী করতে।সুখের দিনে না থাকলেও দুঃখে থাকবে ছাতার মতো।আড়াল করে সব প্রতিজ্ঞা কি করে ভুলে গেলে।নাকি দারীদ্রতা দেখে সরিয়ে নিলে নিজেকে।
সামাজিক যোগাযোগ থেকে সব জায়গা দিয়ে ব্লক করে দিলে।একদিন এই ব্লক অপসনটাও আমি শিক্ষা দিয়েছিলাম।সেই অপশনটা আজ আমার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করলে।আমি হয়ে গেলাম তোমার অরুচিকর ব্যক্তি যার স্পর্শে তুমি নতুন জগৎ পেতে বলেছিলে মুখে।
এখন মনে হয় আমি তোমার জীবনে একটি বস্ত্র ছিলাম।একটু পুরনো হয়েছি তাই ব্যবহার করছোনা তুমি।আমি তোমাকে যে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে সুখি করতে চেয়েছিলাম সেটাই ছিলো আমার ভুল।আমি যদি ছল চাতুরী করে মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে কাটিয়ে দিতাম তুমি বুঝতেও পারতে না।আমি এটা কখনই করবো না ভালোবাসার মানুষটির সাথে।এর পরে দুজনে কত পোস্ট করতে থাকি টাইম এর সাথে টাইমলাইন পরিবর্তন হতে থাকে।কিন্তু চিন্তা করেছো একটা সময় প্রতিটি মুহূর্ত যাকে তুমি না দেখলে পাগল হয়ে যেতে তাকে এমন পর্যায়ে ফেলে দিলে জোর করে মুছে দিলে ফিরিয়ে আনা যায় না।
তুমি চিন্তা করো অনেক দিন হয়ে গেলো আমাকে রেখে সুখ খুঁজছো অন্য কোথাও।সুখের ঠিকানা পেয়েছো কি খুঁজে?আজ এটাই জানতে মন চায় তুমি সুখে আছো কি? এমন চিন্তা নিয়ে সময় অতিবাহিত করছি।আচ্ছা পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতেও তোমাকে কেন ভুলতে পারছিনা আমি?তুমি এতোটা আঘাত দিয়েছো যে এখনো ক্ষতটা শুকাইনি। কতোটা বছর চলে গেলো এখনো হৃদয়টা রক্তাক্ত হয়ে আছে।শরীরের রক্তের সাথে মিশে গেছে আর জীবন থাকতে ভোলা বা মুছে ফেলা কোনটাই সম্ভব না।আজও সতেজ রয়েছো তুমি কাল হয়তো ঝরে যাবে।কালের পরিক্রমায় তখন সব পাল্টে যাবে চিন্তা করো।
একসময় পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফিরিয়ে আনা যায় না।তার জীবনের হোক বা ফেসবুকের তখন কিন্তু চাইলেও ফিরিয়ে আনা যায় না।সম্পর্ক না থাকলে সংযুক্ত থেকে যায়।একটা বয়স পার করার পর যখন মনে পড়বে পারবে কি আনব্লক করতে?যখন লগইন বা লগ আউট করার ক্ষমতা থাকবে না ফেসবুক থাকবে তো চিরকাল।তখন ব্লক লিস্ট থেকে চাইলেও ফ্রেন্ড লিস্টে যেতে পারবে না।জীবন এমনই চলে যায় যদি তুমি চাও থেকে যাও, যদি তুমি চাও ভুলে যাও, যদি তুমি চাও আবার ফিরে আসো।তুমি জড়িয়ে নিলে, চলে গেলে আবার, আসলে আসো তোমার ইচ্ছে হলে।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি যদি কারো জীবনে সাথে মিলে যায় কষ্ট পাবেন না নিজেকে নিজেই সান্তনা দিবেন।নিজের দুঃখ কাউকে শেয়ার করে জাগ্রত করবেন না নতুন করে।